স্বদেশ ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরীক্ষা নিতে না পেরে সব শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় অটোপাস। বিকল্প পন্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এমন সমাধানেও নতুন জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা না হওয়ায় এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তির জন্য মনোনীত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসন। মেধাবৃত্তি প্রদানের বর্তমান নীতিমালা এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। বিশেষ পাসের কারণে বিশেষ নীতিমালা প্রয়োজন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বৃত্তি অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষার্থীদের যেহেতু পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায়, তারা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত কেন থাকবে? কিভাবে কোন পদ্ধতিতে তাদের বৃত্তি দেওয়া যায় এজন্য একটি গাইডলাইন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি সুপারিশ করবে শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিষয় বিবেচনায় এনে তাদের মেধাবৃত্তির জন্য মনোনীত করা হবে। মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুর খবির চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং এক্সেস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইউনিটের উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও থাকবেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি। ৭ এপ্রিল কমিটির প্রথম সভা হওয়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহেদুর খবির চৌধুরী বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রাথমিকের পিইসি পরীক্ষার্থীদের মনোনয়ন করা। কারণ, জেএসসির মেধাবৃত্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমাপনীর যে ফল আছে সেটা বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক সমাপনীর আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই। সে ক্ষেত্রে কী হবে? এসব বিষয় নিয়ে কমিটি আলোচনা করে বিকল্প পদ্ধতি বের করবে।
সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী, জেএসসিতে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ৪৫০ টাকা দেয় সরকার। আর এককালীন অনুদান (বার্ষিক) ৫৬০ টাকা করে দেওয়া হয়। সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাসে ৩০০ টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারা বার্ষিক ৩৫০ টাকা করে পায়। বৃত্তিপ্রাপ্তরা পরবর্তী দুই বছর অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এ বৃত্তির সুবিধা পেয়ে থাকে। রাজস্ব খাত থেকে এ বৃত্তির টাকা নির্বাহ করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের জেএসসির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে দেশের ৯টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৪৬ হাজার ২০০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেধাবৃত্তি পায় ১৪ হাজার ৭০০ এবং সাধারণ বৃত্তি পায় ৩১ হাজার ৫০০ জন।
অন্যদিকে প্রাথমিক সমাপনীতে ট্যালেন্টপুলে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাসে ৩০০ টাকা এবং এককালীন অনুদান (বার্ষিক) ২২৫ টাকা করে দেওয়া হয়। সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাসে ২২৫ টাকা ও বার্ষিক ৩৫০ টাকা দেওয়া হয়। তারা পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ জেএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এ বৃত্তি পেয়ে থাকে।
২০১৯ সালের পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেধাকোটায় (ট্যালেন্টপুল) ৩৩ হাজার ৩০০ এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পায় ৪৯ হাজার ২০০ জন।